বিজ্ঞানের জন্য

জর্জ ব্লেক - ছবি : সংগৃহীত
স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার অন্যতম কুখ্যাত গুপ্তচর জর্জ ব্লেক মস্কোতে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে রুশ মিডিয়ায়। তার বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।

জর্জ ব্লেক ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থা এমআইসিক্সে কাজ করলেও তিনি রাশিয়ার ডাবল এজেন্ট হয়ে কাজ করতেন। ৯ বছর ধরে তিনি গোপনে রাশিয়ার কাছে তথ্য পাচার করেছিলেন। ১৯৬০ সালে তাকে লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর পর জর্জ ব্লেককে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পর ১৯৬৬ সালে কারাগার থেকে পালিয়ে তিনি রাশিয়ায় চলে যান।


কে এই জর্জ ব্লেক?

জর্জ ব্লেকের আসল নাম জর্জ বেহার। ১৯২২ সালে নেদারল্যান্ডসের রটারডামে তার জন্ম হয়। তার বাবা একজন স্প্যানিশ ইহুদি। তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছিলেন। পরে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব পান।

অন্যদিকে ব্লেক নিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজ করেন ডাচ প্রতিরোধ আন্দোলনের হয়ে। এর পর তিনি ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড জিব্রাল্টারে পালিয়ে যান। তার এসব অভিজ্ঞতার কারণে পরে তাকে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থায় যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।

১৯৯০ সালে বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছিলেন, শীতল যুদ্ধের সময় তিনি অন্তত : ৫০০-এর বেশি পশ্চিমা গুপ্তচরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।

তবে তার বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ওই এজেন্টদের ৪২ জন প্রাণ হারিয়েছেন - এ কথা বলা হলে তিনি তা অস্বীকার করেন।


যেভাবে তার ডাবল এজেন্ট হবার কথা ফাঁস হলো

জর্জ ব্লেকের পতনের সূচনা হয় এক পোলিশ এজেন্টের মাধ্যমে। মাইকেল গোলেনিয়েস্কি নামে ওই এজেন্ট তার এক রক্ষিতাসহ স্বপক্ষত্যাগ করে পশ্চিমা পক্ষে যোগ দেন। পরে তিনিই জানিয়ে দেন যে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থার ভেতরে একজন সোভিয়েত স্পাই ঢুকে বসে আছে। তার পরই ব্লেককে লন্ডনে ডেকে এনে গ্রেফতার করা হয়। পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে তথ্য পাচার করার পাঁচটি অভিযোগ স্বীকার করেন তিনি।

বিবিসির সংবাদদাতা গর্ডন কোরেরা বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের গোপন কর্মকাণ্ড ও এজেন্টদের সাথে প্রতারণা করে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থার কাজের গুরুতর ক্ষতি করেছেন এই জর্জ ব্লেক। কারণ এতে সবার চোখে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ব্রিটিশ রাষ্ট্রের একেবারে কেন্দ্রস্থলে এজেন্ট পরিচালনা করতে পেরেছে কেজিবি। পরে তার জেল থেকে পালিয়ে যাওয়াটাও ব্রিটেনকে লজ্জায় ফেলেছিল।

জর্জ ব্লেক কমিউনিজমের অধীনে জীবন কাটাবেন বলেই ঠিক করেছিলেন, কিন্তু তার জীবদ্দশাতেই ওই ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে। ভেঙে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন। তবে রাশিয়াতে তার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কেজিবির উত্তরাধিকারীরা তাকে একজন হিরো হিসেবেই দেখতেন।

ব্রিটেনের কারাগার থেকে তার পালানোর কাহিনী নিয়ে ১৯৯৫ সালে ‘সেল মেটস’ নামে একটি নাটক লেখা হয়েছিল। ২০১৫ সালে বিবিসি তাকে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করে।

সূত্র : বিবিসি

Post a Comment

Previous Post Next Post