বিজ্ঞানের জন্য

অনেকেই মুলা খেতে চান না। কিন্তু শীতের সবজি মুলা পুষ্টিগুণে ভরপুর। খাবার হিসেবে এর স্বাদও অনন্য। । তরকারি হিসেবে বা সালাদে নানাভাবে মুলা খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদেরা বলেন, মুলার মেলা পুষ্টিগুণ। যকৃৎ ও পাকস্থলী পরিষ্কারে মুলার জুড়ি মেলা ভার। 

শীত মানেই জীবাণুদের আড্ডা। আর আমাদের আশেপাশে জীবাণুদের সংখ্যা বাড়বে মানে শরীর খারাপ তো হবেই হবে। আর ঠিক এই কারণেই গরম ভাতের সঙ্গে মুলা তরকারি থাকা চাইই চাই! আসলে এই সবজিটিতে উপস্থিত ফলেট, ফাইবার, রাইবোফ্লবেন, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ক্যালসিয়াম দেহে প্রবেশ করার পর ভেতর এবং বাইরে থেকে শরীরকে এতটাই চাঙ্গা করে তোলে যে ক্ষতিকর জাবীণুদের মারে কোনও রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। সেই সঙ্গে আরও অনেক শারীরিক উপকার পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুলার চেয়ে এর পাতার গুণ অনেক বেশি। কচি মুলার পাতা শাক হিসেবে খাওয়া যায়।

মুলার পাতাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি পাওয়া যায়। খাবার উপযোগী ১০০ গ্রাম মুলাপাতায় আছে আমিষ ১.৭ গ্রাম, শ্বেতসার ২.৫ গ্রাম, চর্বি ১.০০ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫৭ গ্রাম, ভিটামিন সি ১৪৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ বা ক্যারোটিন ৯ হাজার ৭০০ মাইক্রোম ভিটামিন বি-১০.০০৪ মিলিগ্রাম, বি-২০.১০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩০ মিলিগ্রাম, লৌহ ৩.৬ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৪০ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম।

যকৃৎ ও পাকস্থলী বিষমুক্ত করতে পারে মুলা। মুলা সাদা, লাল বা কালো রঙের হতে পারে। শীতকালে সাদা মুলা সহজে চোখে পড়ে। এ মুলায় প্রচুর ভিটামিন সি আছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। কালো রঙের মুলা ও এর পাতা অনেক দিন ধরে জন্ডিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মুলায় যে উপাদান আছে, তা রক্ত শোধনে সহায়তা করে। মুলায় আছে প্রচুর সালফার। 

মুলার যত উপকারিতা:

মায়ের দুধ বৃদ্ধি

শিশুকে যে মায়েরা দুগ্ধপান করান তারা মুলা খেতে পারেন। নিয়মিত মুলা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাবে।

কোষ্টকাঠিন্যমু

লার হজমকারী ক্ষমতা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাইলস রোগে আরাম হয়। পাইলসের কারণে রক্ত পড়া পর্যন্ত বন্ধ হয়।

রক্ত পরিষ্কারক

মুলা রক্ত পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে। লিভার এবং পাকস্থলীর সমস্ত দুষণ এবং বর্জ্য পরিস্কার করে থাকে। মুলা কিডনি রোগসহ মূত্রনালির অন্যান্য রোগে উপকারী।

হজমে উপকার ও ক্ষুধা বৃদ্ধি

কাঁচা মুলা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে হজম হয় দ্রুত এবং রুচি বাড়ে। কচি মুলার সালাদ ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে সহায়ক।

রোগীর পথ্য

জ্বরে ও বিভিন্ন রোগে ভুগলে বা মুখের রুচি নষ্ট হয়ে গেলে মুলা কুচি করে কেটে চিবিয়ে খেলে উপকার পাবেন। জ্বর কমবে, মুখের রুচিও বাড়বে। পেটে ব্যথা বা গ্যাসের সমস্যা হলে মুলার রসের সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাবেন।

ত্বকের যত্নে

ত্বক পরিচর্যায়ও মুলা ব্যবহৃত হয়। এটি ভালো অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। কাঁচা মুলার পাতলা টুকরো ত্বকে লাগিয়ে রাখলে ব্রণ নিরাময় হয়। এছাড়া কাঁচা মুলা প্যাক এবং ক্লিনজার হিসেবেও দারুন উপকারী। একাধিক স্টাডিতে এ কথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত মুলার রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে ভিটামিন সি, জিঙ্ক এবং ফসফরাসের মাত্রা এতটা বৃদ্ধি পায় যে এদের প্রভাবে ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে যেমন সময় লাগে না, তেমনি একাধিক ত্বকের রোগও ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত, মুলার পেস্ট মুখে লাগালেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।

হার্ট ভাল রাখে

এই সবজিটিতে উপস্থিত ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামক একটি উপাদান, শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে হার্টের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে সময় লাগে না। ফলে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে

মুলায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যাদের পরিবারে এই মারণ রোগের ইতিহাস রয়েছে, তারা রোজের ডায়েটে মুলাকে জায়গা করে দিতে ভুলবেন না যেন!

ইমিউনিটির উন্নতি ঘটে

মুলা এবং তার পাতায় উপস্থিত আয়রন এবং ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তলে যে কোনও রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। সেই সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তিও দূরে পালায়।

কনস্টিপেশনের মতো রোগের প্রকোপ কমায়

আপনি কি কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন? তাহলে তো মুলার রস আপনার রোজের সঙ্গী হওয়া উচিত। আসলে এতে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরি উপাদান হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি বাইলের প্রবাহ যাতে ঠিক মতো হয় সে দিকেও খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই কনস্টিপেশনের প্রকোপ কমতে শুরু করে।

ভিটামিনের ঘাটতি দূর হয়

একাধিক স্টাডিতে দেখা গেছে, নিয়মিত মুলার পাতা খাওয়া শুরু করলে দেহের ভিতরে নানাবিধ ভিটামিনের পরিমাণ যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিও দূর হয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।

ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়

ব্লাডার, কিডনি, প্রস্টেট এবং ডাইজেস্টিভ ট্র্যাকে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানদের শরীর থেকে বের করে এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর কর্মক্ষমতা বাড়াতে মুলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, শরীরের কোণায় কোণায় জমে থাকা টক্সিক উপাদানদের ক্ষতি করার আগে তাদের কডনির মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজটাও করে থাকে মুলার রস। প্রসঙ্গত, শরীর যত টক্সিক মুক্ত থাকবে, তত স্কিনের ঔজ্জ্বলতা বাড়বে। সেই সঙ্গে শরীর এবং মন চাঙ্গা এবং রোগ মুক্ত থাকবে।

শরীরে ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমে

প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকায় প্রতিদিন যদি মুলার রস খাওয়া যায়, তাহলে দেহের ভিতরে চোট-আঘাতের কারণে হওয়া জ্বালা-যন্ত্রণা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফ্লেমেশন এবং কিডনির প্রদাহও কমে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি স্টোনের আশঙ্কা কমাতেও মুলার রস নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

অ্যাস্থেমার চিকিৎসায় কাজে

শ্বাস কষ্ট, সেই সঙ্গে হাঁচি-কাশিতে একেবারে জর্জরিত হয়ে পরেছেন? ফিকার নট! আজ থেকেই মুলার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন কষ্ট কমে যাবে। আসলে মুলার রস, লাং-এ জমতে থাকা মিউকাসের দেওয়ালকে ভেঙে দেয়। ফলে অল্প দিনেই অ্যাস্থেমার প্রকোপ কমতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, বমি ভাব, গলার ব্যথা এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যা কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি সাহায্য করে।

ক্যানসারের মতো মারণ রোগ দূরে পালায়

বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে শরীরকে এই মারণ রোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া উচিত। আর এই কাজে আপনাকে ব্যাপকভাবে সাহায্য় করতে পারে মুলা। কীভাবে? আসলে মুলার রসে উপস্থিত অ্যান্থোসায়ানিন এবং ভিটামিন সি শরীরের ভিতরে ক্যানসার সেলেরে জন্ম এবং বৃদ্ধির আটকায়। বিশেষত কোলন, ইন্টেস্টিনাল,স্টমাক এবং কিডনি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমাতে এই পানীয়টি দারুনভাবে কাজে আসে।

সূত্র- ইন্টারনেট  

Post a Comment

Previous Post Next Post