বিজ্ঞানের জন্য

 


বিশ্বের বিপজ্জনক রাস্তা তৈরি করেছে ৩০০০ সৈন্য

সমুদ্রঘেঁষা এক হাইওয়ে রাস্তা। চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে চমকে যাবেন আপনিও! এ রাস্তাটি না থাকলে হয়তো স্থানটিতে যাওয়া-আসার কোনো উপায়ই থাকত না।

বলছি ‘গ্রেট ওশান রোড’ এর কথা। ২৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের এ রোডটি নির্মাণ করতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ দীর্ঘ রাস্তাটি তৈরি করেছে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা ৩ হাজার সৈন্য।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে, যেসব সৈন্যরা সৌভাগ্যবশত বেঁচে গিয়েছিলেন; তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। তবে নিজ দেশে ফিরে অনেক সেনারাই বেকার হয়ে পড়েছিলেন।

বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যরা ১৯১৫ সালের ২৫ এপ্রিল সৈন্যরা গালাইপোলিতে অবতরণ করে। অক্টোবরের দিকে তারা গাজা ও জেরুজালেমে অটোমান সেনাবাহিনী কর্তৃক আটক হয়।

এরপর তারা আত্মসমর্পণ করে অটোমান সেনাবাহিনীর কাছে। ৩ লাখের মধ্যে, ৬০ হাজারেরও বেশি সৈন্যরা ফিরে আসেনি কখনো এবং আরও ১৫ হাজার জন আহত হয়ে বন্দী থেকেছেন কারাগারে।

তাই যারা যুদ্ধ শেষে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে গিয়েছিলেন; তাদের বেকারত্ব দূর করতে সে দেশের সড়ক বোর্ডের চেয়ারম্যান উইলিয়াম ক্যাল্ডার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে একটি সড়ক তৈরির জন্য সেনাদেরকে কাজে লাগান।

সড়কের প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার সময় ‘গ্রেট ওশান রোড ট্রাস্ট’ নামে একটি সংস্থা গঠিত হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি। প্রথমে তিনিই রোড ট্রাস্টে ৩ হাজার পাউন্ড অনুদান দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরও ৮১ হাজার পাউন্ড লেগেছিল সড়কের কাজ সমাপ্ত করতে।

১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া ৩ হাজার অস্ট্রেলিয়ান সৈন্যের অংশগ্রহণে নির্মাণকাজ শুরু হয় সড়কটির। খুব সামান্য কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে সড়ক তৈরির কাজে লেগে পড়েন সৈন্যরা। মরুভূমি ও সাগর ঘেঁষে চলা দূর্গম এলাকায় ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয় ১ মাসে।

যেহেতু অঞ্চলটি উপকূলীয় ও দূর্গম; তাই সেখানে সড়ক তৈরির কাজ করতে বেশ কষ্ট করতে হয় সৈন্যদের। যদিও সৈন্যরা এ কাজটিকে সামরিক মিশন হিসেবেই হাতে নিয়েছিল। তারা সেখানে কয়েকটি তাঁবুতে বাস করত। একটি সাধারণ ডাইনিং রুম এবং রান্নাঘর ছিল তাদের জন্য। সেনা শিবিরটিতে পিয়ানো, গেমস, সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের মতো ছোট ছোট সুবিধা ছিল।

টর্কেয় এবং অ্যালানসফোর্ডের শহরগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে ২৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হয় রাস্তাটি। এটি শেষ হতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। ১৯৩২ সালের নভেম্বরে সড়কটি চালু হয়।

তবে এর কয়েক মাস আগেই রাষ্ট্রপতি হিচকক মারা যান। তাই রাষ্ট্রপতির ব্যবহৃত গাড়িটিই উদ্বোধনের সময় ‘গ্রেট ওশান রোডে’ চালানো হয়। হাইওয়ের জনক হিসেবে তার সম্মানে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভও নির্মিত হয়েছিল।

১৯৩৬ সালের ২ অক্টোবর, সড়কটি ভিক্টোরিয়ান রাজ্য সরকারের সম্পত্তি বনে যায়। ১৯৬০ সালে গ্রেট ওশান রোডের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হোটেল নির্মিত হয় পর্যটকদের সুবিধার্থে।

এ সড়কের পাশেই সমুদ্রের খাঁদ থাকায় গাড়ি চালাতে বেশ অভিজ্ঞ হতে হয় চালকদেরকে। বর্তমানে এটি বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক রাস্তার মধ্যে অন্যতম।

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের এ স্থানটির মনোরম দৃশ্য আকর্ষিত করে পর্যটকদের। সমুদ্র, জঙ্গল, প্রশস্ত হাইওয়ে, খাড়া উপকূল সব মিলিয়ে স্থানটি বেশ সুন্দর। তাই তো পর্যটকরা ভিড় করেন স্থানটিতে।

২০১১ সালে গ্রেট ওশান রোডটি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ছাড়াও বিশ্বের বৃহত্তম যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয় সড়কটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকদের উদ্দেশ্যে উত্সর্গ করা হয় গ্রেট ওশান রোডটি।

Post a Comment

Previous Post Next Post