শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাওয়া প্রসংগে
***মাওলা মোহাম্মদ মাহবুব শাহ্***
আমরা অনেকেই শিশুদের মসজিদে নিয়ে যাই। বিশেষ করে জুমার দিনে বাবা, দাদা-নানা ও ভাইয়ের সঙ্গে মসজিদে যেতে শিশুরাও আনন্দ ও আগ্রহ বোধ করে। তাই পাঞ্জাবি-টুপি পরে তারাও বড়দের হাত ধরে নামাজের জন্য মসজিদে চলে আসে। বাংলার ঐতিহ্যের এটি একটি চোখ জুড়ানো দৃশ্য। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই শিশুদের আল্লাহর ঘরের সঙ্গে পরিচয় করানো ও নামাজের জন্য অভ্যস্ত বানানো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কেননা শিশুকালে যে জিনিসে অভ্যাস হয়, পরে তা করা সহজ হয়, নচেৎ তা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাত বছর বয়স থেকেই নামাজের নির্দেশ দাও। আর যখন ১০ বছর বয়সে উপনীত হবে, তখন তাদের নামাজে অবহেলায় শাস্তি প্রদান করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
শিশুদের মসজিদে নেওয়ার বিষয়ে শরিয়ত কর্তৃক কিছু নিয়ম-নীতি
তবে শিশুদের মসজিদে নেওয়ার বিষয়ে শরিয়ত কর্তৃক কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে, সেগুলো রক্ষার মাধ্যমে এ বিষয়ে কিছু অনিয়ম থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।
একেবারে অবুঝ শিশুকে মসজিদে আনা নিষেধ
একেবারে ছোট ও অবুঝ শিশু, যারা মসজিদের সম্মান ও নামাজের গুরুত্বের জ্ঞান রাখে না, তাদের মসজিদে আনার অনুমতি নেই। কেননা এতে সাধারণত মুসল্লিদের নামাজে বিঘ্ন ঘটে। এ জন্যই হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত ওয়াসিলা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের মসজিদকে অবুঝ শিশু ও পাগলদের থেকে দূরে রাখো, তদ্রূপ ক্রয়-বিক্রয়, বিচার-আচার, উচ্চস্বর, দণ্ডদান ও তরবারি কোষমুক্ত করা থেকে বিরত থাকো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৫০) অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুরা না বুঝে মসজিদের আদববহির্ভূত কিছু কাজ করে ফেলে। উচ্চৈঃস্বরে কথাবার্তা ও হৈ-হুল্লোড় করে থাকে, যা মসজিদের আদবপরিপন্থী কাজ। একটি হাদিসে মসজিদে উচ্চ আওয়াজ ও চেঁচামেচিকে কিয়ামতের নিদর্শন হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। এমনকি কিছু বাচ্চা মসজিদে এসে প্রস্রাব-পায়খানাও করে দিতে দেখা যায়। এতে শিশুদের গুনাহ না হলেও বড়রা শিশুদের এ সুযোগ করে দেওয়ায় তাদের গুনাহ হবে।
ওই হাদিসের দ্বারা প্রমাণিত হয়, যদিও বুঝদার শিশুদের মসজিদে আনা একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ; কিন্তু অবুঝ শিশুদের আনা নিষিদ্ধ।
বুঝদার নাবালেগ শিশুর নামাজের কাতারে অবস্থান
বুঝ হয়েছে, এমন নাবালেগ শিশুদের ব্যাপারে বিধান হলো, যদি শিশু একজন হয়, তাহলে তাকে বড়দের কাতারেই সমানভাবে দাঁড় করাবে। এ ক্ষেত্রে বড়দের নামাজের কোনো অসুবিধা হবে না। একাধিক শিশু হলে সাবালকদের পেছনে পৃথক কাতারে দাঁড় করানো সুন্নাত। তবে হারিয়ে যাওয়া বা দুষ্টুমি করার আশঙ্কা হলে, বড়দের কাতারেও দাঁড়াতে পারবে। (আলবাহরুর রায়েক : ১/৬১৮, আদ্দুররুল মুখতার : ১/৫৭১)
শিশুরা বড়দের কাতারে দাঁড়ালেও নামাজ হবেঃ
অনেকের এ ধারণা রয়েছে যে নাবালেগ শিশুদের বড়দের কাতারের মধ্যে দাঁড় করালে পেছনের মুসল্লিদের নামাজ হয় না বা নামাজ ত্রুটিযুক্ত হয়, আসলে ব্যাপারটি সে ধরনের নয়। বরং যদিও জামাতের কাতারের সাধারণ নিয়ম ও সুন্নাত হলো, প্রাপ্তবয়স্করা সামনে দাঁড়াবে ও অপ্রাপ্তবয়স্করা পেছনে থাকবে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম হলে নামাজ অশুদ্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ জন্য শিশু একা হলে বা পেছনে দুষ্টুমির আশঙ্কা হলে বড়দের কাতারে সমানভাবে দাঁড় করানোই উত্তম।
মসজিদে শিশুশিক্ষাঃ
মসজিদ মূলত নামাজ ও ইবাদত-বন্দেগির জন্য নির্মিত হয়। তাই মসজিদের সম্মান বিনষ্ট হওয়ার কর্মকাণ্ড মসজিদে করার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। মুসলমানের শিশুদের কোরআনি শিক্ষা দেওয়ার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকলে অপারগতার ক্ষেত্রে মসজিদের পবিত্রতা সম্পর্কে জ্ঞাত শিশুদের মসজিদে ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার অনুমতি আছে। মসজিদের বাইরে ভিন্ন কোনো ঘরে শিক্ষার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে থাকবে। যত দিন পর্যন্ত এর ব্যবস্থা না হয়, তত দিন প্রয়োজনে বুঝদার শিশুদের মসজিদে শিক্ষা দিতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের মসজিদের আদব সম্পর্কে সচেতন করার চেষ্টা করবে। তবে অবুঝ বাচ্চাদের থেকে মসজিদ মুক্ত রাখবে। (আলবাহরুর রায়েক : ৫/২৫০)
লেখক- মাওলা মোহাম্মদ মাহবুব শাহ্
Post a Comment