বিজ্ঞানের জন্য

করোনা ভাইরাস নামটি শুনলেই এখন প্রায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। আর আক্রান্ত হলে তো কথাই নেই, এই বুঝি মারা যাচ্ছি ভেবে মানুষ অন্য অসুখ-বিসুখও ডেকে আনে। তবে চাঁদপুরের একই পরিবারের ছয়জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়ে এবং কিছু নিয়ম মেনে বর্তমানে সবাই সুস্থ হয়েছেন।
প্রাণঘাতী করোনা থেকে মুক্ত
এক ফ্রেমে চাঁদপুরের একই পরিবারের ছয়জন 
পরিবারের সদস্যরা সুস্থ হওয়ার পর সবাই যেন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই আতঙ্কিত না হয়ে ঠাণ্ডা মাথায় সচেতনতার সঙ্গে রোগটি মোকাবিলা করতে পারে এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকা ও  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছেন চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন রাসেল। তার স্ত্রীও সরকারি চাকরিজীবী। করোনা মহামারি চলাকালে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।

তাদের সাথে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন ৩ ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু সকল নিয়ম যথাযথভাবে মেনে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন তারা।

বুধবার (১৭মে) শেখ মহিউদ্দিন রাসেল তার নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের করোনা থেকে মুক্তির গল্প শাহতলী ডটকম'কে বিস্তারিত বলেন ।

'পরম করুনাময় রাব্বুল আলামিনের দয়া ও করুনায়ই আমি ও আমার ৪ সন্তানসহ পরিবারের ৬ জন আজ করোনামুক্ত। নিজেদেরকে করোনা যুদ্ধে জয়ী বলবো না। আল্লাহর দয়ায়ই কঠিন এ ভাইরাস থেকে মুক্ত হয়েছি। সকল জয়ের মালিক তিনি এবং সকল প্রসংশাই তাঁরই। আল্লাহ একজন আছে বলেই তাঁর প্রমাণ এখানে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা পজেটিভ খুঁজি কিন্তু করোনার ক্ষেত্রে নেগেটিভই সফলতা। করোনা পজেটিভ থেকে করোনা নেগেটিভ। এ এক কঠিন বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে সঙ্গী করে অতিক্রম করতে পেরেছি শুধুমাত্র ইবাদত আর দৃঢ় মনোবলের কারণেই। আমি বলবো কোন ওষুধ উপাত্ত নয় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ কঠিন সময়টিতে আমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন। তা না হলে একি সাথে সকলেই করোনা পজেটিভ আবার একই সাথে ৬ জনই নেগেটিভ। এ এক কাকতালীয় আচর্য্যজনক ঘটনা।'

আমরা দু’জন স্বামী-স্ত্রী সরকারি চাকুরীজীবী। সঙ্গত কারণেই সরকারের নির্দেশনা পালনে ব্রত। তারই অংশ হিসেবে জেলা পরিষদ জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার জনগণকে দু’দফায় ত্রাণ বিতরণ করে। বিতরণ কাজে আমিও অংশ নেই। আমার স্ত্রীও তাঁর স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির তালিকা প্রণয়নেও আক্কাছ আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে হয়েছে। দু’জনেরই গন্তব্য ছিলো আবার একই বাসার প্রাণে। সব উপকরণ পড়েও সতর্কতার মধ্যে চলেও ভাইরাস যে কখন নিজেদের দেহে বাসা বেঁধেছে তা জানা ছিল না। শরীর একটু খারাপ লাগায় ছুটি নিয়ে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেই।

১৪ মে আমার ও স্ত্রী রোজিনা হাবিবের জ¦র, সর্দি, শরীর ব্যাথা দেখা দেয়। ভাবলাম মৌসুমের ভাইরাস জ¦র। বুঝে উঠতে না উঠতেই বড় ছেলে শেখ আরিফ মহিউদ্দিন (১৫), শেখ আসিফ মহিউদ্দিন (১৩), শেখ আবিদ মহিউদ্দিন (৯) ও আমেনা বিনতে মহিউদ্দিন (৩ বছর ৩মাস) সকলেরই জ¦র, সর্দি, বমি ও ক’জনের পেট খারাপ দেখা দেয়। বিষয়টি স্ত্রী শ্যালক সুমনকে জানায়। তাঁর কথামতে আর সময়ক্ষেপণ না করেই সিভিল সার্জন ডা: সাখাওয়াত উল্লাহ সাহেবের সাথে আলাপ করি এবং তিনি হাসপাতালে যেতে বলেন। আমি এতে বাঁধসাধি যে, ওদেরকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দেয়া সম্ভব না। প্রয়োজনে নমুনা দেব না কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাবো না বলে সিদ্ধান্ত নেই। তিনি বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আমলে নেন। মুহুর্তের মধ্যে সন্তানদের সবাইকে দূরুত্ব বজায় রেখে অবস্থান করার জন্য বলি। সবার গ্লাস, বাটি, প্লেট, ইত্যাদি আলাদা করে দেই। কেউ কাউকে স্পর্শ না করার জন্য তাদের বলি। ছোট মেয়েটা ঘুরে ফিরে আমাদের কাছে। শুধুই কান্নাকাটি করে। এক ছাদের নীচে দু’টি বেড রুম ও ড্রইং রুম মেঝে মিলিয়ে ৫টি বেডে আলাদাভাবে ৬ জনের থাকার ব্যবস্থা করি। বাচ্ছাটাকে তাঁর থেকে একটু দূরে রাখি এবং নিজেদের মনোবল শক্ত রেখে আমরা দু’জনেই তাদের মাথায় পানি দেই এবং লেবু, দারচিনি, এলাচ, লং, আদা, কালিজিরা, তেজপাতা পানিতে দেই। ঝাল দেয়া পানি বাটিতে করে তোয়ালিয়া, গামছা মাথার উপর দিয়ে নাক ও মুখের সামনে নিয়ে ভাপ নেই দিনে অন্তত: ৪ বার। ওরা নিতে চাইতো না, তারপরও চেষ্টা বিফলে যায়নি। কান্নাকাটি করলেও ছোট মেয়েটার মাথা ধরে বাটি মুখের সামনে দিয়ে রাখতাম। ভাঁপ নেয়া এ টক, তিতো পানি আমরা ৫জন পান করি। আর বড় ছেলের গলা ব্যথার কারণে লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করাতাম। ছোট মেয়েটা কে হালকা গরম পানি পান করাতাম। নমুনার রেজাল্ট যাই হোক না কেনো, পজিটিভ ভেবেই যথারীতি চিকিৎসা শুরু করে দেই। স্ত্রীর নাকে গন্ধ না থাকার কারণে সেও লবণ মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করতো। পেট খারাপ থাকার কারণে ওদের দু'একজনকে গরম পানি দেইনি কয়েকদিন। তবে এসএমসির ওরস্যালাইন দেই। রং চা, গরুর দুধে গরম চা পান করাতাম। স্ত্রী রোজই বলতো, ফ্রিজ খুললে ঠা-া বাষ্প গায়ে ও মুখে লাগলে খুব খারাপ লাগে। পরে অবশ্য মুখে মাস্ক পরে দূর থেকে ফ্রিজ খোলা হতো। ফল মালটা, শাক সবজি ভালভাবে ধোয়া ও সিদ্ধ করা হতো। সকলের আলাদা পোশাক, বিছানা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই আমি তা রৌদ্রে দিতাম জীবাণু ধ্বংসের জন্য। এরই মধ্যে বাসার মেঝে বিস্নচিং পাউডার দিয়ে নিজেই ধুয়ে নেই। সকলের হাত সাবান এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ধোয়া হতো।

সিভিল সার্জন-এর কথামতো আমি ডাঃ সাজেদা পলিন ম্যাডামের সাথে কথা বলি। ১৭ জুন সকালে সদর হাসপাতাল থেকে জনৈক ডাক্তার আমাকে কল করেন এবং একেক করে ৬ জনের নাম, জন্ম তারিখ, পেশা, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা নেন। ওই দিন দুপুর ২টায় দুই জন স্বাস্থ্য সহকারী বাসায় এসে আমাদের সকলের নমুনা সংগ্রহ করেন। নমুনা সংগ্রহের সময় তাদের পিপিই ড্রেস পরা দেখে ছোট বাচ্চারা ভয়ে কেঁদে ওঠে এবং নমুনা দিতে নারাজ হয়। অতঃপর স্বাস্থ্য সহকারীরা কাঠির মাধ্যমে গলা থেকে লালা সংগ্রহ করেন। তখন আমরা অধিকাংশই বমি করে দেই। এতে কয়েকটি রোজা রাখা সম্ভব হয়নি। এবার রিপোর্টের জন্য অপেক্ষার পালা। প্রহর গুণছি রিপোর্টের জন্য আর ওদের ও নিজেদের সেবা ওভাবেই চালাচ্ছি। এখন বাচ্চারা বুঝেছে যে, তাদের কঠিন অসুখ হয়েছে। ছোট মেয়েটাও এবার গামছা দিয়েই ভাঁপ নেয় দুষ্টুমির ছলে। কোনো ঠা-া পানি নয়, কুসুম গরম করে সবাই পানি পান করি। তখন আমার ইচ্ছা ছিলো, অসুখ আমার হোক, ওদের কারো যেনো না হয়। আমি একা আলাদা সরে থাকতে পারবো, আর ওর মায়ের হলে সন্তানদের সেবা করতে পারবে না। বিভিন্ন ধরনের শংকা নিয়েই রিপোর্টের জন্য দিন গুণছি আর ইবাদত করছি। খারাপ লাগতো তখন যখন ফজরের নামাজের পরে ওদের দিকে তাকাতাম। বাসাটা যেনো একটা মিনি হাসপাতাল। যে যার জায়গায় পড়ে আছে। ছোট মেয়েটা তার মায়ের সাথে, আবার আমার কোলে। শুধুই যন্ত্রণা কান্নাকাটি। এরই মধ্যে আমার জ্বর ভালো হয়ে গেছে; মনে হয়েছে সুস্থ বোধ করছি। স্ত্রী চরম অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাচ্চাদের কারো জ্বর কিছুটা কমলেও আবার কারো পেটখারাপ থাকে, আবার বমি করে। একটা না একটা উপসর্গ থাকেই। প্রতিটা রাতের বেশি সময় আমরা দ'ুজনেই সজাগ ছিলাম। কপাল ধরে ওদের অবস্থা, শ্বাসপ্রশ্বাস সঞ্চালন লক্ষ্য করতাম। পরে অবশ্য হাত ধুয়ে নিতাম। তখন আমি বিষয়গুলো কঠিনভাবে সামলাই। এর মধ্যে অনেক আত্মীয় স্বজন জেনে যায় আমাদের নমুনা নেয়া হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলা, নিজেদের সেবা, রান্নাবান্না সবমিলিয়ে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হই আমরা।

স্ত্রী রোজই খবর নিতে বলতো রিপোর্ট এসেছে কিনা। আমি নিবো কিনা ভাবি, আবার পিছিয়ে যাই ভয়ে। যদি না খারাপ রিপোর্ট আসে। ২০ মে দুপুর অনুমান ২টায় ফোন-ডাঃ সাজেদা পলিন বলছি, আপনাদের ৬ জনেরই করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। আমি অপ্রস্তুত ছিলাম। মুহূর্তের মধ্যে যেনো মাথায় বাজ পড়লো। এ কথাটাই মনে হয়েছে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন বার্তা। বিষয়টি স্ত্রীকে জানালাম। সে আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। ওদেরকে জানতে দেইনি। দু'জনেই সিদ্ধান্ত নিলাম। আল্লাহ ভরসা। আমরা মনোবল এইভাবে শক্ত রাখলাম যে, আমাদের কিছুই হয়নি। আমরা যদি শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পড়ি তাহলে সন্তানদের বাঁচাতে পারবো না। এই ভেবে নিজেদের সংযত করলাম।

মুহূর্তেই চারিদিকে বিষয়টি চাউর হয়ে যায়। ফেসবুক, অনলাইন মিডিয়াসহ সবর্ত্রই যেন ভাইরাল হয়ে পড়ে। এদিকে দু'জনের মোবাইলে অনবরত কল আসতেই থাকে। বিষয়টি আমি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকতা মহোদয়কে জানাই। তারা আমাকে পরামর্শ ও সান্ত্বনা দেন। এরপর থেকেই আমাদের ও ওদের চিকিৎসা সেবাযত্ন আরও বাড়িয়ে দেই। ভাগ্যিস, আমরা রিপোর্ট পজিটিভ আসার আগেই চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আসছি। এটা ছিল আমাদের সুস্থতার টার্নিংপয়েন্ট। এর কারণে আমি ও আমার স্ত্রী এখন অনেকটা সুস্থবোধ করছি। পজিটিভ রিপোর্টের পর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার বিরামহীন ফোন আসে। ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা শিশু হাসপাতাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, এসপি অফিস, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সদর মডেল থানা, সিভিল সার্জন অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য ক্লিনিক, সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে বিভিন্ন তথ্য যেমন নাম, জন্মতারিখ, পেশা, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা, নমুনা গ্রহণ ও পজিটিভ হওয়ার তারিখ, শারীরিক অবস্থা ইত্যাদি জানতে চায়। দুজনে আমরা সরকারি চাকুরি করাতে হয়তো অতিরিক্ত কিছু সংস্থা এসব তথ্য নিয়েছে।

পজিটিভ রিপোর্টের প্রথম দিন বিকেলে এলাকার রানা নামে এক সন্ত্রাসী আওয়াজ তোলে আমার বাসাকে দেখিয়ে-করোনা হয়েছেরে-করোনা হয়েছেরে। এছাড়া আরো অনেক বাজে কথা বলে উপহাস করতে থাকে। তখন বিষয়টি আমার নজরে আসে। এতে বুঝতে পারলাম আমাদের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেছে। খুব কষ্ট পেয়ে নিজের মধ্যে বিষয়টি চেপে রাখি। আমার সাথে দীর্ঘদিন অভিমান করে থাকা বড়ভাই শেখ মহসিন ওষুধ ও খাবার দেয়ার জন্য পাগলের মতো ছুটে আসে বাসা প্রাঙ্গণে। বাসায় তা দেয়ার সময় মড়ার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো এলাকার রানা নামে ওই যুবক প্রচ-ভাবে বাধা দেয়। তা নিয়ে হতাশ ভাই আমার কথা কাটাকাটি ও বাধা উপেক্ষা করে আমাকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে যায়। তখন তার দরদ উজাড় করা আবেগে দু'ভাইয়ের মধ্যে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। রানার বিষয়টি আমি ৯৯৯ নম্বরে জানালে, আবার এ ধরনের আচরণ করলে তাক্ষণিক তাদেরকে জানাতে বলেন। জানাই চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিনকে। তিনি জানান, করোনা আক্রান্ত বাড়িতে পুলিশ যেতে ও আপনার সাথে কথা বলতে পারবে না। আমি বলেছি পাশের বাড়ি তার। তিনি আমার কাছে তার টেলিফোন নম্বর চান। থানার করোনা সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এসআই আওলাদ সাহেবকে জানালে তিনি রানাকে টেলিফোনে সতর্ক করে দেন। এডিশনাল এসপির স্টেনো আমার চাচাতো ভাই মোসলেউদ্দিনকেও বিষয়টি জানাই, সেও ওসি (তদন্ত)কে জানায়, কিন্তু পুলিশ আসার কোনো দৃশ্যই চোখে পড়েনি। বিষয়টি জেনে সাংবাদিক সোহেল রুশদীও রানাকে টেলিফোনে সতর্ক করে দেন। বাধাদানকারী সোহেল রানা ভুল করেছে, তার পক্ষ থেকে আর করবে না বলে জানানো হয়। নিজের পরিবারের এ অবস্থা নিয়েই ছিলো মাথাব্যাথা। এহেন পরিস্থিতিতে আর বাড়াবাড়ি না করাটাই সঠিক মনে করেছি।

এক সময় সাংবাদিকতা করেছি। তাই হয়তো মিডিয়াগুলো আমাকে ভালোভাবেই চিনে ও জানে। তারা বেশ আন্তরিকতা দেখিয়েছে আমার ছবি ও অনেকে নাম এড়িয়ে গিয়ে। এরই মধ্যে আমার ডান পা ফুলে ফোঁড়ার মত সৃষ্টি হয়। যার ছবি তুলে ডাক্তারকে পাঠাই। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং দ্রুত ডায়াবেটিস মাপার জন্য বলেন। আমি এ নিয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ি। কখনও গুলোকো লিডার মেশিন দিয়ে মেপে দেখিনি। এখন মেশিন পাবো কোথায়, মাপবোইবা কিভাবে। যা ডাক্তারকে জানাই, এমনকি সিভিল সার্জন মহোদয়ের সাথে আলাপ করি। কাউকে পাঠাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। ডাঃ সাজেদা পলিন আপা জানান, অবস্থা খারাপ হলে সদর হাসপাতালে আমাকে ভর্তি হওয়ার জন্য। নিরূপায় হয়ে অনেকটা ঘাবড়ে গিয়ে বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম জাকারিয়া মহোদয়কে ফোনে জানাই। তারা বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন ও কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে কথা বলেন। জনবলের অভাবের কারণে সম্ভব হয়নি লোক পাঠানো। তবে ডাক্তার এন্টিবায়োটিক ও মালিশ এবং ডায়াবেটিস ওষধ বাড়িয়ে দিয়েছেন। ডায়াবেটিস হাসাপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ খবির উদ্দিন সাহেবও পরামর্শ দেন। পরে অবশ্য সহোদর বড়ভাই মহসিন ডায়াবেটিক মেশিন দিয়ে যান এবং ভিডিও কলের মাধ্যমে চালানোর বিষয়টি দেখান। আমি মেশিনটি চালানোর চেষ্টা করেও সফল হইনি। এক পর্যায়ে মেশিনটি নষ্ট করে ফেলি। ডায়াবেটিস মাপার বিষয়ে বড়বোন নুরজাহান বেগম কুমকুম আপা ফেসবুকে সহযোগিতা চাইলে অনেকেই নিজস্ব মেশিনের কথা বলেন। এরই মধ্যে চাঁদমুখের সাধারণ সম্পাদক এইচএম জাকির সংগঠনের সভাপতির সাথে আলাপ করলে জসিম শেখ ভাই একটি মেশিন কিউআরসির মেহেদীর মাধ্যমে বাসায় পাঠান। এ বিষয়ে বাল্যবন্ধু ইউএনবির সাংবাদিক রাশেদ শাহরিয়ার পলাশও পরামর্শ দেন। ফরিদগঞ্জে বাড়ি যমুনা টিভির ঢাকাস্থ সাংবাদিক শাহাদাত ভাই তাঁর পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়ে ভালো হওয়ায় ফোনে তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নেই। মেশিন চালানোর বিষয়ে ডায়াবেটিক হাসপাতালের আইটি অফিসার উজ্জ্বল হোসাইন ভাইও পরামর্শ দেন। অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে আমার, কিন্ত মেশিনে উঠেনি পরিসংখ্যান। এরই মধ্যে ছেলে শেখ আরিফ, আমেনার জ্বর ভালো হয়ে যায়, তবে কাশি ও সর্দি লেগেই আছে সকলের। শেখ আসিফ ও শেখ আবিদের হালকা জ্বর ও পেটখারাপ, বমির বেগ ছিলো। তাদেরকে দিনের মাঝে রোদে ছাদে নিয়ে যেতাম কিছুক্ষণের জন্য। তবে জ্বর কখনও মেপে দেখিনি। কপালে হাত দিয়েই অনুমান করতাম। প্রতিদিন নাক দিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে তা আটকিয়ে আবার মুখ দিয়ে দম ছেড়েছি অন্তত দশ বার। ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যা পেয়েছি তা-ই করেছি।

সিভিল সার্জন জানালেন, সরকারি সিদ্ধান্ত হলো এখন ১৪ দিন পর দ্বিতীয় নমুনা নেয়া। তাকে জানালাম বাচ্চারা আলাদাভাবে থাকছে, দ্বিতীয় নমুনা নেয়া হলে তাদেরকে একত্রে রাখা যেতো। ৩১মে হয় চৌদ্দ দিন। ১ জুন নমুনা নিবে বলে জানান। অবশেষে ওই দিন দুপুরে নমুনা নেন আর তাদের ব্যবহৃত পিপিই, অন্যান্য সামগ্রী বাসায়ই পুড়িয়ে ফেলেন। ভাগ্য কী সহায় বলতে হবে। পরদিন ২জুন থেকে বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে যায় সংগ্রহকারীগণ অসুস্থ হওয়ার কারণে। এবার দ্বিতীয় রিপোর্টের অপেক্ষায়। রুটিনমাফিক হালকা কুসুম গরম পানি খাওয়া, নিয়মিত গরম ভাঁপ নেয়া, লবণ আবার ভিনেগার মিশ্রিত পানি দিয়ে গড়গড়া করা, প্রচুর পানি পান করা, রং চা, গ্রীন টি পান করা, শরীর দুর্বলতা কাটানোর জন্য ওরস্যালাইন খাওয়া, ভিটামিন সি ও ডি যুক্ত খাবার, ফল, শাকসবজি খাওয়া, বাচ্চাদের সিভিট ট্যাবলেট খাওয়া, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা, জ্বরের কারণে মাথায় ঠা-া পানি ও গা মুছিয়ে দেয়া ইত্যাদি রুটিনমাফিক চলছিল। এর জন্য আমার স্ত্রী রোজির অবদানের কথা আমি কখনও অস্বীকার করতে পারবো না। নিজের চিন্তা না করে আমাদের পাঁচজনের পিছনে গাধা খাটুনি খেটেছে। আল্লাহ সহায় থাকাতে তার উছিলায়ই আমাদের আজকের সুস্থতা। তার মনোবল অটল থাকাতে ঘর নামক মিনি হাসপাতালটা আজ এক সুখী বসতঘরে ফিরে এসেছে। আল্লাহ তাঁকে নেক হায়াত দান করুক।

আর এখন এ কথাটিই মনে পড়ছে,
"সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে
গুণবান স্বামী যদি থাকে তার সনে"

সন্তানদের সকলকে নিয়েই নামাজের জামাত আর ইবাদত করেছি। নামাজের জায়নামাজে তাদের মায়ের আহাজারি আল্লাহ শুনেছে। পর্যায়ক্রমে সকলেই সুস্থ হয়ে উঠি। তবে বাচ্চাদের সামান্য কাশি, হাঁচি রয়েছে। আশা করি তাও সেরে যাবে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান স্যারের পাঠানো ফল ফলাদি, শ্বশুরবাড়ি থেকে পাঠানো ঈদের বাজার দিয়ে সেরেছি ঈদ আয়োজন। এডিসি মাহমুদ জামান স্যার সবসময় খোঁজ নিতেন এবং সবধরণের সহযোগিতা করার ইচ্ছা বার বার পোষণ করেন। অনেকেই অনেক কিছু পাঠাতে চেয়েছে, আমি বারণ করে দেই। প্রতিবেশীরা খোঁজখবর না নিলেও আমার বাসার দিকে তাদের চাহনি ছিল বেশ লক্ষ্যণীয়। মনে হয়েছে নিজেরা বুঝি অনেক অপরাধ করে ফেলেছি। ঘটনা জানার পর থেকে চারিদিকের বাসার জানালাও খোলেনি অনেকে এখন পর্যন্তও। আবার এলাকার কেউ আমাকে দূর থেকে বাসায় দেখা মাত্রই খোঁজ নিয়েছেন। আবার অনেকের বাঁকা চোখের চাহনি আমাকে করেছে হতবাক। অনেকে আবার এই সুযোগে ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন ভিন্ন কায়দায়। বাসাটি তাদের কাছে দূর থেকে দেখার একটি দুর্লভ বস্তুতে পরিণত হয়েছে। বাসায়ই সন্তানদের নিয়ে ঈদের জামাত করি। খাবার নিয়ে এগিয়ে আসে ভায়রা মাহবুব ও তার স্ত্রী লোপা। তাদের সরবরাহকৃত গরুর দুধে ক্লান্তি দূর হয়ে যায় নিমিষেই। ভাই মিজানুর রহমানও বাজার নিয়ে হাজির হয়। বড় ভাই সোলেমান শেখ ওরফে ছলু ভাই, ছোট ভাই নাজমুল, সংবাদকর্মী মাঈনুল ও এলাকার জাহাংগীর এবং হাফেজ মাওলানা মাকসুদ হুজুর, তাজুল ইসলাম বেপারী, রহিম বেপারী, রুবেল এসে খোঁজখবর নিয়েছেন।

৪ জুন বিকেলে ডাঃ সাজেদা পলিন আপা জানান, আপনাদের সকলের রিপোর্ট এসেছে। তিনি রিপোর্টের কপি আমার মোবাইল ম্যাসেঞ্জারে পাঠান এবং আরো এক সপ্তাহ বিশ্রামে থাকার জন্যে বলেন। মনটা ভরে গেলো আর মনে হলো এটাই আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের বার্তা। নিজের অজান্তে চোখে জল এসে যায়, এ হলো আনন্দ, আনন্দের ফোঁটা। তা আমি মুহূর্তের মধ্যে সবাইকে জানাই এবং তা ফেসবুকে দেই। তো ওই আগের মতই শুরু হলো মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসার প্রতিফলন মোবাইল কলে এবং ফেসবুকে। সকলে জেনেছে দ্বিতীয় রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তারপরও অনেকে আমাদের প্রতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। বহু দূরত্ব রেখেই কথা বলছে। আমাকে দেখামাত্র মনে হচ্ছে এক আতঙ্ক। ডান পায়ের ফোঁড়া শুকিয়ে যাচ্ছে, অদ্যাবধি আর মাপা হলো না ডায়াবেটিস। যা নিয়ে আমি তখন খুবই চিন্তিত ছিলাম। এখন অবশ্য চিন্তামুক্ত। নেগেটিভ হওয়ার পরও মহসিন ভাই আমাকে বাসায় দেখতে এসেছেন ওষুধপত্র ও খাবার দাবার নিয়ে। আল্লাহ ভাইটির সহায় হোক।

দু'বোন আমার। খবর শুনে তাদের হতাশা দেখেছি। মা-বাবা থাকলে যেমনটি করতেন ঠিক তেমন ভালবাসা ফুটে উঠেছে তাদের মাঝে। আমাদের মন খারাপ হবে তাই মনোবল শক্ত রাখার জন্য প্রতিনিয়ত ফোন করে বুঝিয়েছে। নুরুন্নাহার বেগম হাওয়া আপা ঢাকা থাকেন। হয়ত চোখের জলে দুজনের কাপড় ভিজে গেছে, কিন্তু পরানের ভাইকে বুঝতে দেয়নি। সহোদর বড় ভাই শেখ মহসিন, পান্না ভাবী, ভাতিজা নিরব, নির্ঝর শুনে হাউমাউ করে সকলেই কাঁদেন। আমি তাদের বুঝাতে চেষ্টা করেছি। পরক্ষণেই ভাই আমার ছুটে আসে ভাইয়ের পানে। মা-বাবা নেই আমার। খবর শুনে মুহূর্তের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি ফরিদপুরে থাকা বয়স্ক শ্বশুর ও শাশুড়ি, বড় ও ছোট ভাইসহ সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিয়েছেন, দোয়া করেছেন। মা ও বাবার মতই তাদের ভূমিকাও ছিল অপরিসীম। সেই সুদূর ফরিদপুর থেকে ঈদে টাকা পাঠিয়েছেন বাজার করার জন্যে। প্রতিদিন ৫/৬ বার ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন। জ্বর হয়েছে, তখন নমুনা দিতে চাইনি। শ্যালক শরিয়তপুর থানায় কর্মরত এসআই গোলজার আলম সুমনের কথায়ই করোনার নমুনা দেই। সঠিক সময়ে তার পরামর্শ সত্যিই অনেক কাজে এসেছে। ভাইয়ের মতই কাজ করেছে সে। ঠিকই সে পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে, তবে মনটা পড়ে ছিলো চাঁদপুরের এখানটায়। অনেকের কাছে করোনা মানেই মৃত্যু অবধারিত। আমি মনে করি, করোনা কিছুই না, যদি একে গরম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, রুটিনমাফিক উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো নেয়া যায়। তবে বয়স্কদের বেলায় অন্য কোনো রোগ থাকলে একটু ঝুঁকিপূর্ণ।

এই দুর্যোগ মুহূর্তে যাঁদের স্বাস্থ্যগত সহযোগিতা পেয়েছি বিশেষ করে, তাঁরা হচ্ছেন বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের ল্যাব টেকনিশিয়ান সাখাওয়াত হোসেন (বর্তমানে করোনা আক্রান্ত), সদর উপজেলার স্বাস্থ্য সুপারভাইজার বাবুল চক্রবর্তী, উপ-সহকারী কমিউনিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একেএম মাসুদুর রহমান ও ইউনুছ রিয়াজ। এ ৫ ভাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। আরো রয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা পলিন, সহকারী সার্জন ডাঃ মাসুদ রানা, মেডিকেল অফিসার ডাঃ সৈয়দ আহমেদ কাজল ও ডায়াবেটিক হাসপাতালের ডাঃ মোঃ খবির উদ্দিন। এর মধ্যে ডাঃ সাজেদা পলিন ও ডাঃ মাসুদ রানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যতবার পরামর্শ চেয়েছি ততবার উত্তর দিয়েছেন ডাঃ পলিন আপা। ধন্যবাদ নয় অন্তর থেকে দোয়া করি আল্লাহ তাদের ও তাদের পরিবারকে হেফাজত করুক। এঁরা সকলেই তাঁদের কর্মে প্রমাণ দিয়েছেন মানবতার জন্যই তাঁরা।

পাশাপাশি স্মরণ করছি, ফোনে, ফেসবুকে, ইমু, ম্যাসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শত শত শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয়-স্বজন দরদ উজাড় করা ভালোবাসা-দোয়ার বার্তা জানিয়েছেন। করোনা থেকে সুস্থ হয়েছে এমন ভিডিও অনেকে পাঠিয়েছেন। যা অনেক কাজে এসেছে। এতে আমাদের সকলের মনোবল চাঙ্গা থেকে মজবুতের ভিত তৈরি করেছে। বিশেষ করে নিরাপদ সড়ক চাই বাংলাদেশের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসাইন ভাই, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম মিশু ভাই ফোনে কথা বলেছেন। সরকারের যুগ্ম সচিব আবদুল মান্নান, যুগ্ম সচিব বিধায়ক রায় চৌধুরীসহ উপসচিব পর্যায়ের অনেকে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা পরিষদ সদস্য ফোনে সান্ত্বনা ও পরামর্শ দেন। সুদূর লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব থেকে এবং দেশের বিভিন্ন জেলা, জেলা পরিষদ থেকে অনেকে ফোন করেন। স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান, সিভিল সার্জন, মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ সফিকুল ইসলাম, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক সমাজ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগম, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মানছুর আহমেদসহ অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী, ভক্তকূল খোজঁখবর নেন। তাছাড়া আক্কাছ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবিনা রহমানসহ রোজির ও আমার অফিসের কলিগরাও প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নেন। আর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে শত শত মানুষের কমেন্ট আমাকে করেছে অনুপ্রাণিত। এ ছাড়া এপেঙ্ ক্লাব, নিরাপদ সড়ক চাই, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং, চাঁদমুখসহ বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, আলেম সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দ খোঁজ নেন, আর যে যেখানে পেরেছে মসজিদ, মাদ্রাসায় দোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আবার অনেকে ইতিকাফে বসেও দোয়া করেছেন। আল্লাহর রহমত, অগণিত মানুষের দোয়া, ভালবাসাতেই আজকের সুস্থতা। করোনা পরিস্থিতি আমাকে ভালোভাবেই জানান দিয়েছে, আসলেই মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। তাদের এই ভালোবাসা আমাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে। আমি ও আমার পরিবার সবার কাছে কৃতজ্ঞ। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

পরিশেষে আমি বলতে চাই, "করোনাকে ভয় করো না। এটি একটি ঠান্ডাজনিত ভাইরাস। আমার মতে আক্রান্তের প্রথম ২৪/৪৪ ঘন্টার মধ্যে যদি এটিকে মোকাবেলা করা যায় তাহলেই বিপদ কেটে যাবে। তবে এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা নমুনার জন্য অপেক্ষা না করে জ্বর, সর্দি ইত্যাদি দেখা দিলেই উল্লেখিত ব্যবস্থাগুলো অত্যন্ত দ্রুত গ্রহণ করা উচিত। এর জন্য প্রথম শর্ত হলো আল্লাহকে ডাকা আর নিজের মনোবল শক্ত রাখা। করোনা মানেই মৃত্যু নয়, করোনা মানেই সচেতনতা ও মনোবল শক্ত রাখা। আর সকল জ্বর, সর্দিই করোনা উপসর্গ নয়। সবাই ভাল থাকুন ও সুস্থ থাকুন। আল্লাহ সকলের সহায় হোক। আমিন।"

সবশেষে করোনা জয়ী শেখ মহিউদ্দিন রাসেল চিকিৎসক, শুভানুধ্যায়ী, বন্ধু, প্রতিবেশী, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতা, দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই, যারা তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

Post a Comment

Previous Post Next Post