আগামীকাল রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এবার মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে শহীদ মিনারে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। একই সঙ্গে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে মানতে হবে বিভিন্ন ধরনের বিধি-নিষেধ।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও তথ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে একুশে ফেব্রুয়ারির দিন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের নিয়ম-কানুন এবং শহীদ দিবসের কর্মসূচি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৫ জন প্রতিনিধি হিসেবে ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২ জন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন।
শহীদ মিনারের সব প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন ও লিকুইড সাবান রাখা হবে। মাস্ক পরা ছাড়া কাউকে শহীদ মিনার চত্বরে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকা এবং দিবসটি পালনে নিয়োজিত সব প্রতিষ্ঠান ও সংলগ্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
করোনার কারণে অন্যান্যবারের মতো এবার একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন না। তাদের পক্ষে কর্মকর্তারা একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে জনসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি ঢাকাসহ সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ‘ডিসইনফেকশন (জীবাণুমুক্তকরণ)’ কার্যক্রম এবং ‘ফার্স্ট এইড বুথ’ স্থাপন করবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অবদানের বিষয়টি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থাপন করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাতের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
শহীদ দিবস উদযাপনে গণযোগাযোগ অধিদফতর ঢাকা মহানগরীতে ট্রাকের মাধ্যমে রাজপথে ভ্রাম্যমাণ সঙ্গীতানুষ্ঠান ও নৌযানের সাহায্যে ঢাকা শহর সংলগ্ন নৌপথে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করবে। একই সঙ্গে জেলা-উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা নেবে এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর এ উপলক্ষে তিন ধরনের পোস্টার মুদ্রণ করেছে।
বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, কবি নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর, গণগ্রন্থাগার অধিদফতর, আরকাইভস্ ও গ্রন্থাগার অধিদফতর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমি এবং বিরিশিরি, নেত্রকোনা, রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রন্থমেলা, আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, সুন্দর হাতের লেখা ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও অধীন শাখা জাদুঘর এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সব প্রত্নস্থল ও জাদুঘরগুলোতে শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিস্টিক) শিশুদের বিনা টিকেটে পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।
Post a Comment