মাঘ মাসের শেষ হতে না হতেই রাজশাহীর পুঠিয়ায় বেশ কিছু আম গাছে এসেছে মুকুল। তাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রাজশাহীর আমচাষিরা। মুকুল আসার আগ মুহূর্তে গাছের প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের। তাতেই গাছে টিকে থাকে মুকুল। তাই ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় চাষিরা বর্তমানে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন।বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে করছেন কীটনাশক স্প্রে। এই পরিচর্যায় দূর হবে পোকা, তেমনি গাছে মিলবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। ফলনও আসবে ভালো।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়ায় প্রায় ১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৫৫০টি ছোট বড় আম বাগান রয়েছে। ফজলি, লখনা, গোপালভোগ, আশ্বিনা, হিমসাগর, দুধসরসহ প্রায় ১৫ এর অধিক জাতের আম চাষ করা হয়ে থাকে এ অঞ্চলে। কিন্তু দিন দিন চাষিরা আমের দাম কম পাওয়ায় গাছ কেটে পুকুর বা অন্য ফসল করার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ফলে পূর্বের তুলনা কমেছে বেশ কিছু বাগান।
আগাম বাগান পরিচর্যার বিষয়ে বানেশ্বর এলাকার আমচাষি পারভেজ মোশাররফ জানান, মাঘের শেষে গাছে মুকুল আশায় কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিই। অধিক মুনাফার আশায় মৌসুমের আগেই বাগানের যত্ন নেয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে ২.৫ ইসি ফিডল্যাম, সালফার শাহেন ও ইমিডাক্লোপ্রিড ইমিসাফি ওষুধ স্প্রে করছি। এতে গাছে অধিক মুকুল আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভালো ফলন হবে।
পুঠিয়ার ঝলমলিয়া গ্রামের আমচাষি কোয়েল আহমেদের ভাষ্য, দিনে সূর্যের তেজ আর রাতে পড়ছে শীত। আবার কৃষি অফিসারদের পরামর্শ এমন আবহাওয়াতে গাছের পরিচর্যা প্রয়োজন। তাই গাছে মুকুল টিকিয়ে রাখতে ও ভালো ফলন পাওয়ার আশায় বাগান পরিচর্যা করছি। কিন্তু শীত বেশি পড়লে মুকুল টিকবে না, ফলনও ভালো হবে না।
শীতে আমের মুকুলের পরিচর্যার ও অন্যান্য সমস্যা কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জিএমএম বারি ডলার বলেন, মুকুল যখন বের হয়েছে কিন্তু ফোটেনি তখন ইমিডাক্লোফিড অথবা মানকোজিক গ্রুপের ডাইকোফেন এম-৪৫ নামের ওষুধ প্রতি ১ লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে গাছের মুকুলে স্প্রে করতে হয়। এতে গাছে হপার পোকা বা এ্যানথ্রাকনোস নামের রোগ থেকে মুক্তি মেলে। এটি দ্বিতীয়বার দিতে হবে যখন গাছের মুকুল মার্বেল সাইজের সেপ নিবে তখন।
তিনি আরও বলেন, কুয়াশা খুব বেশি হলে বা দীর্ঘদিন থাকলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে রোগ হতে পারে। এ রোগের কারণে প্রথমে মুকুল সাদাসাদা হয়ে পড়ে কালো বর্ণ ধারণ করে ঝরে পড়ে। দীর্ঘদিন কুয়াশা অথবা হপার পোকার আক্রমণে মুকুলে সটিবল বা কালো আস্তরণ পড়ে থাকে। এ থেকে রোধ পেতে সালফার জাতীয় ফাংগিসাইড যেমন- থিউবিট, কমোলাস নামের ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা থেকে রক্ষা মিলবে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শামসুন্নাহার ভূঁইয়া জানান, আবহাওয়া সূত্র মতে কয়েক দিনের মধ্যেই কমে আসবে শীত। তাই সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে আশা করা যায়। এ বিষয়ে চাষিদের বাগান পরিচর্যায় আগে থেকেই ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আর চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন।
Post a Comment