বিজ্ঞানের জন্য

গভীর শোক, শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গতকাল শনিবার  পালিত হয়েছে স্বাধীনতার স্থপতি, সাবেক প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস। সরকারি ও বেসরকারিভাবে সারা দেশে গতকাল নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।

জাতীয় শোক দিবসটি সরকারিভাবে পালনের পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করেছে। দলীয় কার্যালয়সমূহ এবং সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এছাড়া কুরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং দুস্থ ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ৪৫তম শাহাদৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার স্মরণে নির্মিত জাদুঘরের (পূর্বতন বাসভবন) সামনে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রতিকৃতির বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণের পর হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়, বিউগেলে করুন সুর বেজে ওঠে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠিত বিশেষ মোনাজাতে এ সময় অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তাঁর তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেলসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাতে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যদের বুলেটের নির্মম আঘাতে শহিদ হন।
জাতির পিতার দুই কন্যা শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়ে  সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের জাতির পিতা এবং তাঁর পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটিতে যান (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর) এবং সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন। যেখানে ‘৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ইতিহাসের বর্বরতম এক হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী পরে বনানী কবরস্থানে যান। যেখানে তাঁর মা’ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং শেখ রাসেলসহ সেদিনের ঘটনায় নিহত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সমাহিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদনের পর কবরগুলোতে ফুলের পাঁপড়ি ছড়িয়ে দেন।

তিনি সেখানে ফাতেহা পাঠ করেন এবং বিশেষ দোয়ায় শরিক হন। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর,স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার আওয়ামীলীগের শীষ নেতারা, যুবলীগ ছাত্রলীগ স্বেচ্চাসেবকলীগসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচি :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে প্রতি বছরই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া আসেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি বাবার সমাধিতে আসতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমাধি সৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।

সকাল ১০টায় জাতির জনকের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল অনার গার্ড প্রদান করে। বেজে ওঠে বিগউলের করুন সুর। পরে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি-র নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান নেতাকর্মীরা।

এসময় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি, আফজাল হোসেন, সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খানসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এরপর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দিতে বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যেসব খুনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। যে দেশে পালিয়ে আছে সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পেছনে জিয়াউর রহমান জড়িত। তাই দেশের মানুষ জিয়াউর রহমানকে ঘৃণাভরে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। বেলা ১১টায় সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিলে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা টানানো হযেছে। জেলার বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ।

এদিকে শোক দিবসে রাসেল স্কয়ার থেকে পান্থপথ, ধানমন্ডি ৩২ থেকে ২৭ নম্বরÍ সবখানেই হাজার হাজার মানুষের ঢল। করোনা উপেক্ষা করে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে গভীর শ্রদ্ধা জানাতে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এসেছে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। এ সময় বঙ্গবন্ধু স্মৃতিবিজড়িত ভবনের ভেতর-বাহির ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। বেলা বাড়ার সঙ্গে ভিড়ও বেড়ে চলেছে। পরনে শোকাবহ পোশাক আর বুকে কালো ব্যাজ নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি বিজড়িত ভবনে গেছেন নারী-পুরুষ, শিশু কিশোর। হাতে ফুল ও কালো পতাকা। কারও কারও হাতে ছিল পুষ্পস্তবক। সকাল থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষ বিনম্র চিত্তে জাতির পিতাকে স্মরণ করে প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন।

ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। এরপর সর্বস্তরের মানুষের জন্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বর চত্ত্বর উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। শুরু হয় সর্বস্তরের নেতাকর্মী আর সাধারণ মানুষের ঢল। করোনায় সীমিত পরিসরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আহ্বান জানানো হলেও তা উপেক্ষিত ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতি সাধারণ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

তবে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও ঢল নেমেছে ধানমন্ডিতে। ঝিগাতলা মনেশ্বর স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী রাইসা জামান তার বাবা সিদ্দিক জামানের সঙ্গে ৩২ নম্বরে এসেছেন বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে। রাইসার বাবা সারাবাংলাকে বলেন, সে এখনও ছোট। কিন্তু গতকয়েক বছর তাকে নিয়েই আসি। যদিও এবার করোনার কারণে আসবো কি না দ্বিধায় ছিলাম। কিন্তু মেয়ে নিজেই তাগাদা দিচ্ছিলো। সে গতকাল ফুল কিনে প্রস্তুত ছিল। তাই আর বাসায় বসে থাকতে পারিনি। চলে আসলাম বাঙালীর কিংবদন্তি নেতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণফোরাম, সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, পুলিশের আইজি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবার, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সহ বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post