বিজ্ঞানের জন্য

বিজ্ঞানের সাধনার পথে পৃথিবীর সেই যে চলা শুরু হয়েছিল, সেই চলার কোনো বিরাম নেই। আগুন আবিষ্কারের মধ্যে লুকিয়ে ছিল সেই বীজ। সেই বীজ বর্তমানে শাখা-প্রশাখা মেলে বিশাল মহীরূহ। লক্ষ আলোক বর্ষ দূরে অবস্থিত গ্রহের গঠন, ভূমিরূপ, তাতে প্রাণের উপস্থিতির সম্ভাবনা ইত্যাদি জেনে ফেলাটাও বিজ্ঞান সাধকদের কাছে এখন কোনো ব্যাপার নয়।
তবে এটি ঠিক যে, চাকা আবিষ্কারের পরই লাফ দিয়ে ভিনগ্রহে মহাকাশযান পাঠানো সম্ভব হয়নি। এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসতে কেটেছে হাজার হাজার বছর। আর সেই সময়টার মধ্যে হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানের অসংখ্য ছোটো বড়ো আবিষ্কারও। এই আবিষ্কারগুলি না হলে হয়তো আজকের পৃথিবী এমন দেখতে হতো না।
পৃথিবীকে কয়েক ধাক্কায় অনেকটা করে এগিয়ে দেওয়ার মতো এমন কয়েকটি যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়ে আজ কথা বলা যাক। সময়টা বাঁধা থাকল ১৭১২ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে।

১. নিউকোমেনের স্টিম ইঞ্জিন

১৭১২ সালে থমাস নিউকম্যান প্রথম বাষ্পচালিত ইঞ্জিন আবিষ্কার করলেন। এটি কয়লা খনিগুলি থেকে জল পাম্প করে বের করে দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। এর ফলে খনিতে খননকারীদের খননকার্য চালাতে খুবই সুবিধা হতে শুরু করেছিল।
এই ইঞ্জিন বাস্পে চলত। তার জন্য কয়লা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হতো। ফলে প্রচুর কয়লা লাগত। এই কারণের জন্যই এটি ততটা উপযুক্ত ছিল না।  

২. স্পিনিং জেনি

১৭৬৪ সালে আবিষ্কার হয়েছিল স্পিনিং জেনি। স্পিনিং জেনি হল স্পিনিং ইঞ্জিন। এটি আবিষ্কার করেছিলেন জেমস হারগ্রিভেস। এই ইঞ্জিনটি অদক্ষ শ্রমিকের দ্বারা চালানো সম্ভব ছিল। এই যন্ত্রটি এক সঙ্গে অনেক সুতো কাটতে পারত। ফলে বয়ন শিল্পে এক যুগান্তর ঘটে গেল।

৩. কারখানা

শুনলে অবাক লাগবে। কারখানাও কিনা আবিষ্কার হয়েছিল। হ্যাঁ ঠিক তাই। চারদিকে যখন নানান রকমের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ধুম পড়েছে, সব কিছুই ক্রমশ উন্নততর রূপ পাচ্ছে। কাজ করা অনেক বেশি সহজ হয়ে যাচ্ছে, যে কোনো কাজই কম সময় বেশি করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তখনই আবিষ্কার হল আধুনিক কারখানার চেহারা। আধুনিক কারখানা প্রথম স্থাপিত হয়েছিল ১৭৭১ সালে, ব্রিটেনে। আবিষ্কর্তা ছিলেন রিচার্ড আর্করাইড। প্রতিষ্ঠা করলেন ক্রোমফোর্ড মিল। তার পর থেকেই তিনি আধুনিক কারখানার জনক নামে পরিচিত। এই সময় এই মিলে প্রায় ২০০ জন শ্রমিক এক সঙ্গে কাজ করতেন। দু’টি শিফটে কাজ হত। ১২ ঘণ্টার দুইটি শিফট ছিল। যেখানে ছিল জলশক্তিতে চালিত সুতির স্পিনিং মিল।

৪. ওয়াটের স্টিম ইঞ্জিন

নিউকোনের স্টিম ইঞ্জিন পথ দেখিয়ে ছিল। এর পর অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়েই স্টিম ইঞ্জিনের আরও উন্নততর একটি রূপান্তর নিয়ে এলেন স্কটিশ ইঞ্জিনিয়ার জেমস ওয়াট।
আগেরটি থেকে এটি প্রায় একই রকম দেখতে হলেও এতে অনেক কম জ্বালানি লাগত। বাণিজ্যিক ভাবে এটি বাজারে এসেছিল ১৭৭৬ সালে। প্রচুর ক্রেতাও জুটে ছিল সেই সময় এটি কেনার জন্য।
নতুন এই বাস্পচালিত ইঞ্জিনটি শিল্পের উন্নয়ণে আমূল পরিবর্তন এনে দিল।

৫. রেল ইঞ্জিন

বাণিজ্যিক ভাবে প্রথম বাস্পচালিত রেল ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন জন ব্লেনকিনসোপ। সময় সাল ১৮১২-১৩। এর পরের এক ধাপ উন্নত রেলইঞ্জিন নাম লোকোমোশন নম্বর-১ আবিষ্কার করেন জর্জ স্টিফেনসন এবং তাঁর ছেলে রবার্ট স্টিফেনসন ও কোম্পানি। এটিই প্রথমবার মানুষ পরিবহণ করেছিল। রেল ইঞ্জিনের সেই যে আবিষ্কার হয়েছিল তার পর কালের পথ পেরিয়ে আজ বুলেট ট্রেন।

৬. ফটোগ্রাফ

১৮২৬ সালে জোসেফ নাইসাপোরে নিয়াপ্স ফটোগ্রাম আবিষ্কার করেন। এটিই ছিল ক্যামেরায় তোলা ছবির প্রথম স্থায়ী ব্যবস্থা। তিনি ‘হেলিওগ্রাফি’র উন্নতি সাধন করেছিলেন।

৭. টাইপরাইটার

১৮২৯ সালে টাইপরাইটার আবিষ্কৃত হয়। এই টাইপ্রাইটার আবিষ্কার করেন আমেরিকার বিজ্ঞানী ইউলিয়াম বুর্ট। তিনি এই যন্ত্রটির নাম দিয়েছিলেন ‘টাইপোগ্রাফার’। তবে এটি ছিল খুবই ধীর গতির একটি যন্ত্র। এটির সাহায্যে খেলার গতি যা ছিল তার থেকে অনেক দ্রুতগতিতে হাত দিয়ে লিখে ফেলা যেত। তবুও বুর্টকেই এই ‘টাইপরাইটার’ যন্ত্রের জনক বলা হয়।
এর পর আধুনিক টাইপরাইটার আবিষ্কার করেছিলেন ক্রিস্টোফার শলেস। ৩৮ বছর পর ১৮৬৭ সালে আধুনিক দ্রুতগতি সম্পন্ন এই টাইপরাইটারটি আবিষ্কার করেন শলেস।

৮. ইলেকট্রিক জেনারেটর

সাল ১৮৩১। আবিষ্কৃত হল বৈদ্যুতিক জেনারেটার। এই বৈদ্যুতিক জেনারেটরের আবিষ্কারক মাইকেল ফারাডে। এটির নাম দেওয়া হয়েছিল ফারাডে ডিস্ক। প্রাথিমক ভাবে এটি খুব বেশি কার্যকর ছিল না। তবে নতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে এটি খুব শীঘ্রই উন্নতি লাভ করেছিল।

৯. টেলিগ্রাফ

১৮৩৭ সালের ২৫ জুলাই, স্যার ইউলিয়াম ফাদারগিল কুক এবং চার্লিস হুইট স্টোন প্রথম বার সাফল্যের সঙ্গে বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ সংযোগ আবিষ্কার করেন। লন্ডনের ইউস্টন ও ক্যামডেন শহরের মধ্যে প্রথম বার এই টেলিগ্রাফ যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এর পরের বছর প্যাডিংটন থেকে ওয়েস্ট ড্রেটন পর্যন্ত  প্রায় ১৩ মাইল লম্বা স্থানে এই ব্যবস্থা স্থাপিত হয়। এটিই ছিল বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা।
আমেরিকায় এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল ১৮৪৪ সালে। সেই সময় বালটিমোর থেকে ওয়াশিংটন ডিসি পর্যন্ত এই ব্যাবস্থা স্থাপিত হয়েছিল।
এই ব্যবস্থার সময়ে আরও এক জন এই কাজে বিশেষ ভূমিকা রেখে ছিলেন। তিনি হলেন আমেরিকার স্যামুয়েল মোর। তিনি টেলিগ্রামের মধ্যে দিয়ে খুব অনায়াসে বার্তা বা মেসেজ পাঠানোর ব্যবস্থা আবিষ্কার করেছিলেন। সেই ব্যবস্থা এখনও ব্যবহার করা হয়।

১০. ডায়নামাইট

এই ডায়নামাইট আবিষ্কার করেছিলেন আলফ্রেড নোবেল। তিনি একজন সুইডিশ রসায়নবিদ। আবিষ্কারটি করেছিলেন ১৮৬০ সালে।এই ডায়নামাইট আবিষ্কারের আগে পাহাড় ভাঙার জন্য গান পাউডার ব্যবহার করা হত।
ডায়নামাইট তার থেকে অনেক বেশি সুবিধা জনক, শক্তিশালী ও নিরাপদ। অনেকটা দূর থেকে ও ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা যায়।
আলফ্রেড তাঁর আবিষ্কারের নাম দিয়েছিলেন গ্রিক শব্দ ‘ডায়নামিস’-এর সঙ্গে মিলিয়ে। এই ‘ডায়নামিস’-এর অর্থ হল ‘পাওয়ার’ অর্থাৎ ‘শক্তি’। তিনি অবশ্য কখনও চাননি সেনাবাহিনীর কাজে এই ডায়নামাইট ব্যবহার করা হোক। কিন্তু তাঁর ইচ্ছে আর পূরণ হল কোথায়!
সূত্র : ইন্টারনেট

Post a Comment

Previous Post Next Post